Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাঠের শাকসবজি ও ফলে ইঁদুরের ক্ষতি এবং দমন ব্যবস্থাপনা

ইঁদুর স্তন্যপায়ী, সর্বভুক ও নিশাচর  প্রাণী। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে ফসলের জন্য ক্ষতিকর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর মানুষের প্রধান শত্রু। মানুষের আশপাশে থেকেই এরা মাঠে, গুদামে, বাসাবাড়িতে, অফিস আদালতে প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে চলেছে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ইঁদুরের সমস্যা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (১৯৬৭) হিসাব মতে, ইঁদুর প্রতি বছর বিশ্বের ৩ কোটি ৩৩ লক্ষ টন খাবার নষ্ট করে। এশিয়ায় ইঁদুর বছরে ১৮ কোটি মানুষের ১২ মাসের খাবার নষ্ট করে। বাংলাদেশে প্রায় ৫০-৫৪ লক্ষ লোকের এক বছরের খাবার ইঁদুরের কারণে নষ্ট হয়। ইঁদুর দ্বারা বছরে ফসল ও অন্যান্য  জিনিসপত্রের প্রায় ১.৫-২.০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। তাছাড়াও ইঁদুর প্লেগসহ প্রায় ৬০ প্রকার রোগ ছড়ায়।  শাকসবজি ও ফলে প্রধানত  দুই জাতের ইঁদুর বেশি ক্ষতি করে থাকে যাহা মাঠের কালো ইঁদুর ও গেছো ইঁদুর/ ঘরের ইঁদুর নামে   পরিচিত।


মাঠের কালো ইঁদুর বা ছোট ব্যান্ডিকুট ইঁদুর

(Lesser bandicoot rat, Bandicota  bengalensis(Gray)
সব রকমের কৃষিজাত ফসলেই এদের পাওয়া যায়। এছাড়া শহর এলাকা, ঘর বাড়ি এবং গুদামেও এদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। মাঠের কালো ইঁদুর মাঠ ফসলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। এরা মাঝারি আকৃতির, ওজন প্রায় ১৫০-৩৫০ গ্রাম, পশম কালো ধূসর রঙের। মাথা ও শরীরের মোট দৈর্ঘ্যরে তুলনায় লেজ কিছুটা খাটো। ফলগাছ ছাড়া সকল ধরনের কৃষিজাত ফসলে এরা প্রত্যক্ষভাবে আক্রমণ করে ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর মাঠ ও গুদামে উভয় স্থানেই গর্ত করে, ফসল কেটে, খেয়ে, গর্তে নিয়ে, গুদামে খেয়ে, পায়খানা প্রস্রাব ও পশম, মাটি ও শস্যের সাথে মিশিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে।


গেছো ইঁদুর/ ঘরের ইঁদুর

(House/ roof rat) Rattus rattus
গেছো ইঁদুর সাধারণত মাঝারি ধরনের, লম্বাটে, লালচে বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় এদের ওজন প্রায় ১০০- ১৫০ গ্রাম। শরীরের নিচের দিকটা সাদাটে বা হালকা বর্ণের। দেহের দৈর্ঘ্য ৭-২২ সেমি. মাথা ও শরীরে মোট দৈর্ঘ্যরে তুলনায় লেজ লম্বা। লেজের দৈর্ঘ্য ৫-২৩ সেমি.। এই জাতের ইঁদুর গুদাম জাত শস্য, ঘরে রাখা খাদ্যশস্য, ফলমূল, তরিতরকারি ইত্যাদির ক্ষতি সাধন করে থাকে। এরা মাটিতে গর্ত না করে ঘরের মাচায় বা গুপ্ত স্থানে, গাছে বাসা তৈরি করে বংশবৃদ্ধি করে। এদেরকে সাধারণত মাঠে কম দেখা যায়, তবে বাড়ির আশপাশে, উঁচু এলাকায় ও নারিকেল জাতীয় গাছে বেশি দেখা যায়।

 

সবজি ফসলে ইঁদুরের ক্ষতি
ইঁদুর সব রকম সবজিতে আক্রমণ করে থাকে তবে চারা গাছ ও পরিপক্ব অবস্থায় বেশি ক্ষতি করে থাকে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, ব্রোকলি এবং বেগুনের চারা ইঁদুরের দ্বারা ক্ষতি হয়। মাঠের কালো ইঁদুর (Bandicota  bengalensis) জমিতে গর্ত করে এবং গাছের  লতা পাতা কেটে দেয় ও গর্তে নিয়ে জমা করে পরবর্তী পর্যায়ে যখন ফল ধরে তখন ফল খেয়ে নষ্ট করে ও ফল পচে যায় এবং খাবার অনুপযোগী হয়ে পরে। গেছো ইঁদুর বা জধঃঃঁং   ৎধঃঃঁং  এদের বেশি ক্ষতি করে থাকে। টমেটো, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজির ও অনেক ক্ষতি করে থাকে।


কুমড়া জাতীয় সবজিতে ইঁদুরের ক্ষতির ধরণ
মিষ্টিকুমড়া, করলা, তরমুজ, বাঙি, লাউ, শশা ইত্যাদি কুমড়া জাতীয় সবজি ক্ষেতে ইঁদুর প্রথমে এলোমেলোভাবে গর্ত করে মাটি উঠিয়ে ডিবি করে এবং গাছের লতা পাতা কেটে দেয় ও গর্তে নিয়ে জমা করে। পরবর্তী পর্যায়ে গাছে ফল ধরলে  ইঁদুর ফল খেয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে ও ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ইঁদুর সবজি ক্ষেতে ক্ষতি করে থাকে। মাঠের কালো ইঁদুর সবজি ক্ষেতে প্রধানত বেশি ক্ষতি করে থাকে।


আলু ও মিষ্টিআলুতে ইঁদুরের ক্ষতির ধরন
গোলআলুর ক্ষেতে গাছের অংগজ বৃদ্ধির সময় ইঁদুর প্রথমে মাঠে ২/১টি গর্ত করে মাটি উপরে উঠিয়ে ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর আলুর মাটির ওপরের কা- ও ডগা কেটে  দেয়। আলু ধরার সময় ইঁদুর গাছের শিকড় কেটে দেয়। তারপর আলু যখন বড় হয় তখন ইঁদুর মাটির নিচের আলু গর্ত করে  খেয়ে  ক্ষতি করে থাকে। সাধারণত ইঁদুর আলুর শতকরা ৫-৭ ভাগ ক্ষতি করে থাকে। মিষ্টিআলুর ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ আলু থেকে বেশি দেখা যায়। মিষ্টিআলুর ক্ষেত লতায় ঢেকে যায় ফলে ইঁদুর প্রচুর সংখ্যক গর্ত করে ডগা ও লতা কেটে গর্তে নিয়ে যায়। ক্ষেতে গর্ত করে মাটির ঢিবি তৈরি করে। অর্ধ পরিপক্ব মিষ্টিআলু কামড়িয়ে খেয়ে ক্ষত সৃষ্টি  করে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি করে থাকে। ফলে মিষ্টিআলুর ফলন কমে যায়।

 

ফলে ইঁদুরের ক্ষতি  
নারিকেল, কমলালেবু, জম্বুরা, আনারস, পেঁপে ইত্যাদি ফলে ইঁদুর অনেক ক্ষতি করে। বিভিন্ন ফলের চারা গাছ এবং পরিপক্ব ফলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। পেঁপে ও নারিকেলের চারা ইঁদুর দ্বারা অনেকটা ক্ষতি হয়। চারা অবস্থায় ক্ষতির  পরিমাণ প্রায় ৪০-৫০% পর্যন্ত হয়ে থাকে। কমলালেবু, জাম্বুরা, মাল্টা ফলের শাস খেয়ে ফেলে যার ফলে খাবারের অনুপযোগী হয়ে যায়।

 

নারিকেলের ক্ষয়ক্ষতির নমুনা
সাধারণত গেছো ইঁদুর নারিকেলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। একটি জরিপে দেখা গিয়েছে যে, পরিপক্ব নারিকেলের চেয়ে কচি ডাবে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ফলে ডাব ছিদ্র যুক্ত হয়ে যায় এবং গাছ থেকে মাটিতে ঝরে পড়ে। এতে নারিকেল পরিপক্ব হতে পারে না এবং ফলন অনেক কমে যায়। বাংলাদেশে দক্ষিণ অঞ্চল বরিশাল, খুলনায় নারিকেলের বেশি ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত জরিপে দেখা গেছে, গড়ে বছরে গাছপ্রতি ১৫-২০টি নারিকেল ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি বা নষ্ট হয় যার আনুমানিক মূল্য     ২৫০-৪০০ টাকা।

 

আনারসে ক্ষতির ধরন  
দুই ধরনের ইঁদুর আনারসের ক্ষতি করে থাকে। সাধারণত আনারসের নিচের দিকে যেখান থেকে পাকা আরম্ভ করে সেখান থেকে ২-৩ ব্যাসার্ধের বাঁকানো গর্ত করে আনারসের ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর কোনো কোনো সময়  চিবিয়ে আনারসের ক্ষতি করে থাকে। ফলে বাজারে এর দাম কমে যায় এবং আনারসের ছত্রাক রোগ হয়ে পচে নষ্ট হয়। এভাবে আনারসে প্রায় শতকরা ৬-৯ ভাগ ক্ষতি করে থাকে।

 

সমন্বিত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা  
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুধাবন করা প্রয়োজন যে, ইঁদুর দমন একটি পরিবেশগত কৌশল যে ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, কিন্তু কোন প্রজাতিকে ধ্বংস করা নয়। ইঁদুর দমনের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, ইঁদুরের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য ও বাসস্থান সম্পর্কে জানা এবং এই সব উপাদানগুলো সীমিত করা যা ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ইঁদুর দমন পদ্ধতিসমূহকে আমরা সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। (ক) পরিবেশসম্মতভাবে ইঁদুর দমন বা অরাসায়নিক পদ্ধতি (খ) বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ইঁদুর দমন বা রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুুর দমন ।


ক) পরিবেশ সম্মতভাবে দমন : কোন রকম বিষ ব্যবহার না করে অর্থাৎ পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে ইঁদুর দমনই হলো পরিবেশসম্মতভাবে ইঁদুর দমন বা অরাসায়নিক পদ্ধতি। বিভিন্ন ভাবে এটা করা যায়। যেমন-
 

পরিদর্শন ও সজাগ দৃষ্টির মাধ্যমে
ইঁদুর দমনের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এ সমস্যা সম্বন্ধে সর্বদা সজাগ থাকা যার অর্থ হচ্ছে ঘর বাড়িতে বা ক্ষেত খামারে ইঁদুরের উপস্থিতি, গতিবিধি এবং আক্রমণের তীব্রতার ওপর সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং নিয়মিত পরিদর্শন করা। ইঁদুরের উপস্থিতির কোন চিহ্ন দেখা মাত্র তাকে খুঁজে বের করে যে কোন উপায়ে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করা উচিত। এ পরিদর্শন কোন এলাকার ইঁদুর দমন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

আশ্রয়স্থল কমানো/বাসস্থান ব্যবস্থাপনা
*গভীর চাষাবাদ, ফসলি জমি ও আইলের উপর আগাছা পরিষ্কার করেও ইঁদুরের সংখ্যা কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
*ফসলের অমৌসুমে আশেপাশের আগাছা পরিষ্কার করে ইঁদুরের খাদ্য ও বাসস্থানের উৎস কমিয়ে ইঁদুরের  সংখ্যা কমানো যায়। আগাছা পরিষ্কার করার ফলে শিকারী প্রাণীর জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং ইঁদুর অন্য স্থানে চলে যায়।
*ফসল কাটার পর ধানের অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে বা সরিয়ে ইঁদুরের সংখ্যা সীমিত করা যায়।


ধাতব পাত দ্বারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফল গাছে ইঁদুর দমন : নারিকেল গাছসহ অন্যান্য গাছে ইঁদুর দমনের ক্ষেত্রে ধাতব পাত দ্বারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফল গাছে সাফল্যজনকভাবে ইঁদুর দমন করা যায়। এক্ষেত্রে টিনের পাত লাগানোর পূর্বে গাছকে ইঁদুর মুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব কমপক্ষে ৫ ফুট বা ২ মিটার ব্যবধান হতে হবে। যাতে ইঁদুর অন্য গাছ থেকে ডাল বেয়ে টিন লাগানোর গাছে না আসতে পারে। নারিকেল, সুপারি গাছসহ ফল উৎপাদনকারী গাছের গোড়া হতে ২ মিটার ওপরে গাছের খাড়া কা-ের চারিদিকে  টিনের পাত শক্তভাবে আটকিয়ে দিতে হয়। ইঁদুর গাছের গোড়া (নিচ) থেকে উপরে উঠতে গিয়ে টিনের পাত কিছুটা মসৃণ হওয়ার বাধা প্রাপ্ত হয়ে ফসকে পড়ে যায় ফলে উপরে উঠতে পারে না। এই পদ্ধতি অরাসায়নিক হওয়ায় পরিবেশ দূষণমুক্ত, অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী ও লাভজনক। সাধারণত এ পদ্ধতি ব্যবহারে ১টি নারিকেল গাছে ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়। একবার টিনের পাত লাগালে ৪-৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে।


জৈব নিয়ন্ত্রণ বা পরভোজী প্রাণীর মাধ্যমে ইঁদুর দমন : জীবিত কোনো প্রাণীকে অন্য কোনো জীবিত প্রাণী দ্বারা নিয়ন্ত্রণকেই জৈব নিয়ন্ত্রণ বলে। অন্যান্য প্রাণীর মতো ইঁদুর জাতীয় প্রাণীরও পরভোজী প্রাণী আছে, তন্মধ্যে বিড়াল, বনবিড়াল, কুকুুর, খেকশিয়াল, পাতিশিয়াল, বাজপাখী, চিল, পেঁচা, বেজি, সাপ, গুঁইসাপ ইত্যাদি প্রাণী  ইঁদুর খায়। এ সব উপকারী পরভোজী প্রাণী মেরে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।


নিবিড়ভাবে ফাঁদ পাতার মাধ্যমে  ইঁদুর দমন : নিবিড়ভাবে বিভিন্ন রকমের জীবন্ত ও মরণ ফাঁদ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা যায়। ফাঁদে ইঁদুরকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সহজে স্থানীয় ভাবে পাওয়া যায় এমন খাদ্যই টোপ হিসাবে ব্যবহার করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ শুঁটকি মাছ, বিস্কুট, আলু, পাউরুটি ইত্যাদি।
 

ফাঁদ স্থাপনের কৌশল
*সাধারণত যেখানে ইঁদুর দেখা যায় এবং যেখান দিয়ে ইঁদুর চলাফেরা করে যেমন দেয়ালের পার্শ্ব, চালের উপর, গাছের ওপর বা গর্তের কাছাকাছি সেখানে ফাঁদ স্থাপন করা উচিত।
*সতেজ গর্তে কাঁচা গোবরের মিশ্রণ (২০-৩০%) দিয়েও  ইঁদুর দমন করা যায়।


*গর্তে পানি  ও ধোঁয়া দিয়ে ইঁদুর দমন করা যায়
(খ) রাসায়নিক দমন বা ইঁদুরনাশক দিয়ে দমন  (ঈযবসরপধষ ঈড়হঃৎড়ষ গবঃযড়ফ) পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই বহু যুগ ধরে রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন চলে আসছে। বিষক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে রাসায়নিক পদ্ধতিকে মূলত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে, (ক) তীব্র বা তাৎক্ষণিক বিষ (অপঁঃব ঢ়ড়রংড়হ) (খ) বহুমাত্রা বা দীর্ঘমেয়াদি বিষ (ঈযৎড়হরপ ঢ়ড়রংড়হ)।
ক. তীব্র বা তাৎক্ষণিক বিষ (অপঁঃব ঢ়ড়রংড়হ)
যে সমস্ত বিষ খেলে ইঁদুরের মৃত্যু ঘটায় তাদেরকে তীব্র  বিষ বলা হয়। যেমন-জিংক ফসফাইড, বেরিয়াম কার্বনেট, আরসেনিক ট্রাইঅক্সাইড, ব্রোমেথিলিন ইত্যাদি। একমাত্র ‘জিংক ফসফাইড’ সরকার অনুমোদিত তাৎক্ষণিক বা তীব্র বিষ। এ ধরনের বিষটোপ ইঁদুরের পাকস্থলীতে এসিডের সংস্পর্শে এসে এক প্রকার বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি করে। এ গ্যাস লিভার ও কিডনিকে অকেজো করে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করে ইঁদুরের মৃত্যু ঘটায়।
বিষটোপ তৈরিও খুব সহজ। তাই অতি সহজে কৃষক ভাইয়েরা জিংক ফসফাইড বিষটোপ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করতে পারে। এই বিষ থেকে তৈরি বিষটোপ খেয়ে ইঁদুর সাথে সাথেই মারা যায়। কিন্তু এই বিষটোপের প্রধান অসুবিধা হলো বিষটোপ লাজুকতা। বিষটোপ ব্যবহারের পূর্বে ২-৩ দিন বিষহীন টোপ ব্যবহার করে ইঁদুরকে টোপ খেতে অভ্যস্ত করে নিলে ইঁদুর দমনে সফলতার হার অনেক বেড়ে যায়। তবে কোনো ক্রমেই পর পর দু-তিন রাত বিষটোপ ব্যবহারের পর ঐ স্থানে এক মাস আর এ বিষ ব্যবহার না করাই ভালো।
(খ) দীর্ঘমেয়াদি বিষ  (ঈযৎড়হরপ ঢ়ড়রংড়হ)
যে সমস্ত বিষ খেলে ইঁদুর তাৎক্ষণিকভাবে বিষক্রিয়ায় মারা না গেলেও ধীরে ধীরে অসুস্থ বা দুর্বল হয়ে ২-১৪ দিনের মধ্যে মারা যায় তাদেরকে  দীর্ঘমেয়াদি বিষ বলা হয়। সকল দীর্ঘমেয়াদি বিষই রক্তজমাট বাঁধার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে প্রধানত শরীরের ভেতরে বা বাইরে অনবরত রক্তক্ষরণের মাধ্যমে ইঁদুর দুর্বল হয়ে মারা যায়। ইঁদুর এ ধরনের বিষ খেয়ে আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে গর্তের ভেতর মারা যায়, সেজন্য মৃত ইঁদুর সচরাচর চোখে পড়ে না। এ ধরনের বিষ খেলে সহসা কোনো আক্রান্ত লক্ষণ ধরা পড়ে না বিধায় পরিবারের অন্যান্য ইঁদুররাও এ ধরনের বিষটোপ খেতে কোনো কুণ্ঠা/দ্বিধাগ্রস্ত হয় না। ফলে একসাথে অনেক ইঁদুর মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে। এ ধরনের বিষটোপে বিষটোপ লাজুকতা দেখা যায় না। পরীক্ষামূলকভাবে মাঠে এ জাতীয় বিষ দ্বারা শতকরা নব্বই ভাগ ইঁদুর মারা সম্ভব। এদেশে ল্যানির‌্যাট,  ক্লের‌্যাট, ব্রোমাপয়েন্ট নামে বিভিন্ন কীটনশকের দোকানে পাওয়া যায়।

 

বিষটোপ প্রয়োগ পদ্ধতি
মাঠে যেখানে ইঁদুরের উপস্থিতি বুঝা যায় সেখানে বা ইঁদুর চলাচলের রাস্তায় বা সতেজ গর্তের আশপাশে জিংক ফসফাইড বিষটোপ কোন পাত্রে রেখে দিতে হবে। তাই জমির উপরে বিষটোপ না দিয়ে ৩-৪ গ্রাম বিষটোপ  একটি কাগজ দিয়ে পুঁটলি বেঁধে সতেজ গর্তের মুখ পরিষ্কার করে গর্তের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে হবে। তবে সব সময় লক্ষ রাখতে হবে কাগজটি যেন কখনো মাটির নিচে চাপা না পড়ে। এরপর গর্তের মুখ হালকাভাবে মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। জমির উপর ও গাছে বিষটোপ ব্যবহারের সময় বেইট স্টেশনের ভেতর প্রয়োগ করলে সফলতা অনেক বেশি হয়।


এভাবে বিষটোপ প্রয়োগের সুবিধা হলো (১) এই বিষটোপ  ইঁদুর বেশি খায় (২) অন্য কোন প্রাণী যেমন পাখি, বিড়াল, কুকুর বা অন্যান্য পোষা প্রাণী এই বিষটোপ খেতে পারে না। এতে অপ্রত্যাশিত প্রাণীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকেনা। তাছাড়া পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনাও খুব কম। মৃত ইঁদুর গর্তের ভেতর থাকে বলে মৃত ইঁদুর খেয়ে কাক, চিল ও বিড়াল মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এই পদ্ধতির সফলতা প্রায় ২৫% বেশি। তাছাড়া কৃষক ভাইদের তেমন কোন বাড়তি খরচ নেই। তাই গর্তের ভেতরের ইঁদুর সফলভাবে দমনের জন্য এই পদ্ধতি বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সহজেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।


গ্যাসবড়ি দিয়ে ইঁদুর দমন
বিষটোপ ছাড়া এক প্রকার গ্যাস বড়ি দিয়েও ইঁদুর দমন করা যায়। যেমন-এ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট। এই ট্যাবলেট বাজারে ফসটক্সিন, কুইকফিউম, কুইকফস, এলুমফস, এগ্রিফস, গ্যাসটক্সিন নামে পরিচিত। ইঁদুর আছে এমন  গর্তের  মুখের মাটি  সরিয়ে  প্রতিটি সতেজ গর্তের ভিতর একটি করে বড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে গর্তের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।
বেশির ভাগ ইঁদুর গর্তে বাস করে বলে সম্পূর্ণভাবে দমন বা নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তাই এদের সংখ্যা কমিয়ে মূল্যবান ফসল রক্ষা করে খাদ্যাভাব দূর করার চেষ্টা করতে হবে। কোন  নির্দিষ্ট  একক  পদ্ধতি  ইঁদুর  দমনের  জন্য  যথেষ্ট নয়। ইঁদুর  দমনের  সফলতা  নির্ভর  করে  সকলের  সম্মিলিত  প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন সময়োপযোগী পদ্ধতি ব্যবহারের  উপর। অতএব সম্মিলিত এবং সময়োপযোগী দমন পদ্ধতি প্রয়োগ করলেই ইঁদুরের উপদ্রব কমানো সম্ভব।

 

ড. মোঃ শাহ আলম

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,অনিষ্টকারী মেরুদন্ডী প্রাণী বিভাগ, বিএআরআই, গাজীপুর, মোবাইল : ০১৯১১৮৫৭৫৮৬, alamvpd@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon